প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় বিস্তারিত জানুন

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনগরমে সবার প্রিয় পানীয় ডাবের পানি। শরীরে ক্যালশিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে ডাবের পানি খেতে হয়। নিচে প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় ও মুখে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা অনেকেই জানে না। অজানা সব তথ্য জানতে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।

প্রতিদিন ডাবের পানি খেলে ডিহাইড্রেশন ও বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি১ ও ভিটামিন সি রয়েছে, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

পেজসূচিপত্রঃ প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় সে সম্পর্কিত সূচিপত্র

ভূমিকা

ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন ডাবের পানি খেলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে, পেশার নিয়ন্ত্রণ, শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ছাড়াও অনেক উপকারিতা আছে। ডাবের পানির অপকারিতাও আছে। যেমন কিডনি রোগী, যাদের ঠান্ডা জনিত রোগ আছে এমন ব্যাক্তি ছাড়াও অনেকের জন্য ডাবের পানি ক্ষতিকর। এছাড়াও মুখে ডাবের পানির উপকারিতা এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

উপকারিতা: গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা  অপরিসীম। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এর প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি মা ও সন্তান উভয়ের জন্যেই বেশ উপকারি। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ডাবের পানি। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় ভ্রুণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ডাবের পানিতে শর্করার পরিমান কম থাকায় গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের পেশার লো হয়ে যায়, এ অবস্থায় নিয়মিত একটি করে ডাব খেলে পেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে। বর্তমানে গর্ভাবস্থায় অনেকের শরীরে রক্ত শূণ্যতা দেখা যায়। নিয়মিত ডাব খেলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এসময় প্রায়ই বমি বমি ভাব হয়। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে এই সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়। এসময় অনেকের গ্যাসের সমস্য়া হয়। এ অবস্থায় ডাবের পানি অনেক কার্যকরী হয়।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাবে অনেকের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ডাবের পানি পান করলে দুর্বলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমান বেড়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এসময় আঁশসমৃদ্ধ ডাবের পানি পান করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এসময় নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মূত্রনালীর সংক্রমণ জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অপকারিতা: গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির অপকারিতা নেই। আমরা জানি কোনো কিছুর অতিরিক্ত ভালো না। তাই অতিরিক্ত ডাবের পানি পান না করে দিনে এক-দুইটি ডাবের পানি পান করুন।

খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা


আমরা বেশির ভাগ মানুষ ডাব খায় অতিরিক্ত গরম পড়লে বা দুপুরে খাবার খাওয়ার পর। কিন্তু সকালে কেউ খালি পেটে ডাব খায় না। আমরা বেশিরভাগ মানুষ ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম চা, কফি বা পানি পান করে থাকি। এ বিষয়ে অনেক পুষ্টিবিদের মত হলো, সকালবেলা চা, কফি বা খালি পানি পান করার পরিবর্তে যদি ডাবের পানি পান করা যায় তবে তা শরীরের জন্য বেশ উপকারি হয়।

আমরা জানি যে, ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, খনিজ লবন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। তাই যদি সকালে ডাবের পানি পান করা যায় তবে সারাদিন আর শরীরের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হবে না। এছাড়া শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকবে। কাজে মনোযোগী হওয়া যায়।

ডাবের পানিতে শর্করার পরিমান কম থাকায় সহজে হজম হয়। ফলে ওয়ার্কআউটের পরে বা আগে ডাবের পানি পান করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেকে পানিশূন্যতাই ভোগেন। প্রতিদিন সকালে ডাবের পানি পান করলে পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ডাবের উপকারিতা


ডাবের উপকারিতা অনেক। ডাবের পানি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমন রোগ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাই এবং ত্বক মসৃণ থাকে। ডাবের পানিতে বেশকিছু উপকারি এনজাইম আছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হওয়ায় শরীরে মেদ জমতে পারে না। ফলে ওজন কমতে থাকে। এছাড়া মেটাবলিজমের উন্নতিও করে থাকে।

ডাবের পানিতে উপস্থিত পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানিতে থাকা পটাশিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ফলে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়া উচিত।

ডাবের পানিতে থাকা ডায়াটরি ফাইবার ও অ্যামাইনো এসিড রক্তে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানিতে নিয়াসিন, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন ও পাইরিডোক্সিন উপাদান থাকে। ফলে নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে শরীরে শক্তি পায়। এছাড়াও ডাবের পানিতে অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ ও অ্যান্টি-ভাইরাল উপস্থিত থাকে। ফলে শরীরকে নানাবিদ সংক্রমন থেকে রক্ষা করে।

আরও পড়ুনঃটক দই দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

ডাবের পানি শরীরের পানিশূণ্য়তা দূর করে। ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান থাকায় খনিজের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে ডাবের পানির গুরুত্ব অপরিসীম। ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। ডাবের পানিতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্ত ও হাড়ের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরে উপস্থিত টক্সিন ইউরিনের সাথে বের করে দেয়। ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অতিরিক্ত অস্বস্থি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য় করে। হরমোনাল সমস্যা (যেমন: হরমোনের কারণে চুলপড়া, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি) সমাধানের জন্য নিয়মিত ডাব খেতে হবে।

এছাড়াও যাদের প্রসাবের পর জ্বালা-পোড়ার সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে এই সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়।

ডাবের অপকারিতা


আমরা সবাই ডাবের উপকারিতা সম্পর্কে জানি। কিন্তু ডাবের অপকারিতা আমরা অনেকেই জানি না। যেমন:- আমরা জানি কিডনি ভালো রাখতে ডাবের পানির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু যাদের কিডনি রোগ আছে বা হয়ে গেছে তাদের জন্য ডাবের পানি খাওয়া সম্পর্ণ নিষেধ। কারণ কিডনির সমস্যার কারণে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীর থেকে বের হয়।

আমরা জানি ডাবের পানিতেও পটাশিয়াম পাওয়া যায়। সুতরাং এই অবস্থায় যদি ডাবের পানি পান করা হয় তবে ডাবের পটাশিয়াম ও শরীরের পটাশিয়াম মিলিত হয়ে হৃদপিণ্ড অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে পারে। তাই কিডনির সমস্যা হলে ডাবের পানি কখনই খাওয়া যাবে না।

এছাড়া অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করলে ডায়ারিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উপাদানগুলো শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করলেও হঠাৎ করে যদি কোনো একটির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইলেকট্রোলাইট ইত্যাদির ভারসাম্য নষ্ঠ হয়ে যায়। এছাড়াও ঠান্ডার রোগ আছে এমন রোগীদের ডাবের পানি না খাওয়ায় ভালো।

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়


বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাড়কে শক্ত ও হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান শরীর থেকে বের করতে ডাবের পানি সাহায্য করে। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সাইটোকিনিস অ্যান্টি-এজিৎ উপাদান শরীরে বয়সের ছাপ পরতে দেয়না এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ডাবের পানিতে নিয়াসিন, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন ও পাইরিডোক্সিন থাকে যা শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন রোগ জীবাণুর সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ডাবের পানি পান করলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে যায়। তাই প্রতিদিন ডাবের পানি পান করা উচিৎ।

মুখে ডাবের পানির উপকারিতা


ডাবের পানি সুমিষ্টতার পাশাপাশি অনেক উপকারি হয়ে থাকে। ডাবের পানি শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ত্বকের জন্যেও বেশ উপকারি। ডাবের পানিতে অ্যান্টি-মাইক্রোভাল ও অ্যান্টি-ফাংগাল প্রপার্টিস রয়েছে, যা স্ক্রীনকে ব্রণ ও স্ক্রীনের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডাবের পানিতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্ক্রিনের টোন লাইট ও সানবার্ন দূর করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, এসেনশিয়াল মিনারেল, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে , যা ত্বকের জন্য বেশ উপকারি। ডাবের পানিকে স্ক্রিন ক্লিঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করে স্ক্রিনের ময়লা দূর ও স্ক্রিনকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। ডাবের পানি ত্বকের পোরস ছোট করে, স্ক্রিনের পিএইচ বজায় রাখে এবং স্ক্রিনকে ময়েশ্চারাইজ করে।

ডাবের পানির সাথে মসুর ডালের পাউডার ও অ্যালোভেরা মিশিয়ে মুখে কিছুক্ষন লাগিয়ে রাখলে পিম্পল দূর করে ও পিম্পলের দাগ হালকা করে তোলে। মুখে যদি বসন্তের দাগ থাকে তবে প্রতিদিন ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে এই দাগ উঠে যায়। মানসিক চাপ বা অন্য কোনো কারণে ত্বক ও চুলের উপরে বয়সের ছাপ চলে আসে।

নিয়মিত ডাবের পানির ব্যবহার চেহরায় উজ্জ্বলতা আনে এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমে গিয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে। ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমানে আয়রন রয়েছে , যা দেহে আয়রনের পরিমান বজায় রেখে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানে খনিক লবন আছে, যা দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও মাড়িকে মজবুত করতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে থাকা খনিজ লবন ত্বক কুঁচকে যাওয়া ও ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য


আজকে আমরা প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় ও মুখে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে ডাবের পানির সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন। বন্ধুদের কেউ এসব তথ্য জানাতে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন