ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী-ওযুর সঠিক নিয়ম ও ভঙ্গের কারণসমূহ

ওযু ইসলামের বিধি-বিধানের মধ্যে অন্যতম একটি বিধান। সালাত আদায়ের পূর্বে অবশ্যই অযু করতে হবে। কিন্তু অনেকেই ওযু করার সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে ইবাদত শুদ্ধ হয় না। তাই আজকে আমরা ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী, ওযুর সঠিক নিয়ম ও ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।



শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসলের পরেই ওযুর স্থান। আজকে ওযুর সঠিক নিয়ম ও ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। চলুন শুরু করি।

ভূমিকা

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ

অর্থ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। [সূরা মায়িদাহঃ আয়াড-৬ ]

ওযুর ফরজ কয়টি

ওযুর ফরজ চারটি।
  • মুখমন্ডল ধোয়া।
  • দুই হাত কনুইসহ ধোয়া।
  • মাথা মাসাহ করা।
  • দুই পা টাখনুসহ ধোয়া।

ওযু করার পদ্ধতি

  • প্রথমে মনে মনে ওযুর নিয়ত করতে হবে ।
  • তারপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে ওযু শুরু করতে হবে ।
  • তিনবার দুই-হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে। হাতে ঘড়ি, চুড়ি, আংটি ইত্য়াদি থাকলে তা নাড়িয়ে তার নিচে পানি পৌছাতে হবে অন্য়থায় ওযু হবে না। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খিলাল করতে হবে। (নখে নেল পলিশ বা পুরু পেন্ট থাকলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে, কিন্তু আলতা বা মেহেদি লেগে থাকলে কোনো সমস্য়া হবে না)।
  • তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার ভালোভাবে কুলি করতে হবে। মুখের ভিতরে যেন কোনো প্রকার খাদ্যকণা না থাকে। তবে রোজা থাকা অবস্থায় সাবধাণতা অবলম্বন করতে হবে।
  • তারপর হাতে পানি নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে টেনে নিয়ে বাম হাত দিয়ে ঝাড়তে হবে তিনবার।তবে রোজা থাকা অবস্থায় সাবধাণে পানি টানতে হবে যাতে করে পানি নাকের ভিতর দিয়ে পেটে চলে না যায়।
  • অতঃপর হাতে পানি নিয়ে মুখমন্ডল ( কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনির দাড়ির নিচের অংশ এবং এক কান থেকেপ অপর কান পর্যন্ত) তিনবার ভালোভাবে ধুতে হবে। যদি কোনো অংশ শুকনো থাকে তবে ওযু হবে না। মুখে হালকা দাঁড়ি হলে সমস্ত দাঁড়ি ভিজাতে হবে আর যদি ঘণ হয় তবে আঙ্গুল দিয়ে খিলাল করলেই হবে।
  • অতঃপর প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাতের কনুই থেকে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে তিনবার ধুতে হবে।
  • অতঃপর পানিতে দুই হাত ভিজিয়ে আঙ্গুলগুলো মুখোমুখি করে মাথার সামনের দিক( চুল যেখান থেকে গজাতে শুরু করেছে) থেকে মাথার পিছনে (চুলের গোড়া যেখান থেকে শেষ হয়েছে) নিয়ে গিয়ে আবার সামনের দিকে নিয়ে আসতে হবে। তারপর শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভিতরের অংশ এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। এটা একবার করতে হবে। তবে ঘাড়‌ মাসেহ করা যাবে না কারণ ঘাড় মাসেহ করা বিদআত।
  • তারপর প্রথমে ডান পায়ের টাখনু বা গোড়ালি পর্যন্ত ও পরে বাম পায়ের টাখনু বা গোড়ালি পর্যন্ত এমনভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন পায়ের কোনো অংশে ময়লা বা শুকনো না থাকে। সেজন্য আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। তিনবার করে ধুয়ে নিতে হবে।

ওযু শেষে দোয়া পড়া

اشْهَدُ انْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُهوَرَسُولُه

"আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ'বদুহু ওয়া রসূলুহু"।

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই। তিনি এক, অদ্বিতীয় । আমি আরও সাক্ষ্য় দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও প্রেরিত রাসূল।

ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ

  • পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হলে।
  • মুখ ভর্তি করে বমি করলে।
  • ঘুমিয়ে পড়লে।
  • অজ্ঞান(যাতে বোধ শক্তি লোপ পায়) হলে।
  • সালাতে উচ্চস্বরে হাসলে।
  • দেহের যেকোনো অংশ দিয়ে রক্ত, পুঁজ বা এজাতীয় কিছু বের হলে।

যেসব পানি দিয়ে ওযু করা যাবে

  • প্রবাহমান পানি দিয়ে।
  • কুয়ার পানি দিয়ে।
  • পুকুর বা ট্যাঙ্কের পানি দিয়ে।
  • বৃষ্টির পানি দিয়ে
  • ঝর্ণা, নদী ও সাগরের পানি দিয়ে।
  • বরফ গলা পানি দিয়ে।

যেসব পানি দিয়ে ওযু করা যাবে না

  • অপরিচ্ছন্ন বা অপরিষ্কার পানি দিয়ে।
  • ওযু বা গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি দিয়ে।
  • গাছ বা ফল নিঃসৃত রস বা পানি দিয়ে।
  • অল্প পরিমান পানি যেখানে অপবিত্র জিনিস(মল-মূত্র, রক্ত, মদ ইত্যাদি) মিশে গেছে এমন পানি দিয়ে।
  • হারাম প্রাণীর(শূকর, কুকুর ও অন্য়ান্য হিংস্র প্রাণী) পান করা পানি দিয়ে।
  • পানিতে কোনো কিছু মিশানোর জন্য যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গাঢ়ত্বের পরিবর্তন হয়েছে এমন পানি দিয়ে।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা ওযু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী, ওযুর সঠিক নিয়ম ও ভঙ্গের কারণসমূহ এই আর্টিকেলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আশা করি আপনারা ওযু সম্পর্কে নতুন ও সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। বন্ধুদের কে এসব তথ্য জানাতে আর্টিকেল টি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন