বেশি আনারস খেলে কি হয় বিস্তারিত জানুন

আনারস পুষ্টিগুনে ভরপুর, মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু বেশি পরিমাণে আনারস খাওয়ার ফলে অনেকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই আনারস বেশি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানেনা। তাই আজকে বেশি আনারস খেলে কি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।


বেশি আনারস খাওয়ার কারণে মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যা অনেকেই জানেনা। বেশি আনারস খেলে কি হয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকা

আনারস সুস্বাদু, পুষ্টিগুনো ভরপুর ও মৌসুমী ফল। আনারসের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। আনারস খেলে রাতকানা, কাশি, জ্বর, জন্ডিস, রক্ত জমাট বাধা, খাবার হজম জনিত সমস্যা, কৃমি, ক্যান্সার, হার্টের সমস্যাসহ আরও বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিন্তু আনারস বেশি খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও খালি পেটে অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

আনারস বেশি হয় কোন অঞ্চলে

আনারস পুষ্টিগুণে ভরপুর ও সুস্বাদু ফল। আনারস Bromeliaceae পরিবারভুক্ত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Anarus comosus। গবেষকদের মতে, ব্রাজিল আনারসের উংপত্তিস্থল। আনারস উংপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ‍কোস্টারিকা, ফিলিপাইন, ইন্ডিয়া ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চল আনারস চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি অঞ্চলে আনারস চাষ করা হয়। তবে মৌলভীবাজার, সিলেট, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলায় প্রচুর পরিমাণে আনারস চাষ করা হয়।

এছাড়াও পার্বত্য জেলা খাগড়াছরীর মানিকছড়ি, রামগড়, গুইমারা ও মহালছড়ি উপজেলায় ব্যাপকভাবে আনারস চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে আনারস চাষ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ২০১৫-১৬ সালে দেশে ২০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আনারস চাষ করে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন আনারস উংপাদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুরেই আনারস উংপাদন হয় ১ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। যা দেশের মোট উংপাদনের ৪২ শতাংশ ।

বেশি আনারস খেলে কি হয়

আনারস সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। আনারসের উপকারিতা অনেক কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় আনারস খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আনারসে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ পাওয়া যায়। ফলে বেশি পরিমাণে আনারস খেলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে পুষ্টিবিদরা তাদেরকে এই ফলটি এড়িয়ে চলতে বলেন।

আধা কাপ আনারসে শর্করার পরিমাণ ১৫ গ্রাম যা ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আনারসে ব্রোমেলেইন নামে এক ধরনের এনজাইম থাকে, যা শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলে রক্ত পাতলা করে দেয়। ফলে রক্তপাতের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়। আনারসে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় অত্যাধিক পরিমাণে আনারস খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।

আনারস খাওয়ার অপকারিতা

আনারস অনেক উপকারী ফল। কিন্তু আনারসেরও কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যা আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন। আনারসের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি পাওয়া যায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও আমাদের দেহের রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আনারস অ্যাসিটিক ফল হওয়ায় খালি পেটে খেলে প্রচন্ড পেট ব্যথা হতে পারে।

অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে প্রচণ্ড খিদে পেতে পারে তার সঙ্গে বমি বমি ভাব, পেটের সমস্যা , অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, অনিদ্রা, দুর্বলতা, ক্ষিদের চোটে পেটে মারাত্মক ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। মহিলাদের মাসিক বা ঋতুর সময় অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে তাদের রক্তক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া আনারসের প্রচুর পরিমাণে এনজাইম থাকে যা শরীরের অতিরিক্ত গেলে বমি, ত্বকের প্রদাহের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আনারস খাওয়ার উপকারিতা

আনারস সুস্বাদু, পুষ্টিগুণে ভরপুর ও মৌসুমী ফল। আনারস টক এবং অ্যাসিটিক জাতীয় ফল। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম পাওয়া যায়। আনারস খেলে হজমজনিত যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আনারস জন্ডিস ও জ্বর প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ পাওয়া যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও আনারসে কোন ফ্যাট না থাকায় আনারস খেলে শরীরের ওজন কমাতেও সহায়তা করে। আনারস দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে ধমনী ও শিরার মধ্য দিয়ে সারা শরীরে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হয়। আনারসে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, যা দাঁতের সুরক্ষা ও মাড়ির যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

আনারসে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন (চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার রোগ) থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত আনারস খেলে ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% পর্যন্ত কমে যায়। ফলে আমাদের চোখ সুস্থ থাকে। আনারসের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। যা আমাদের শক্তির যোগান দেয়। আনারসে প্রোটিন পাওয়া যায়, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বকের কুঁচকে যাওয়া রোধ করে।

আনারসের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়, যা হাড়কে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং হাড়কে মজবুত করে তোলে। আনারসে উচ্চমাত্রায় পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আছে, যা ফ্রি-রেডিকেল (মানব দেহের কোষের ওপর বিরুপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে ক্যান্সার সহ হার্টের নানা রোগ সৃষ্টিকারী) থেকে দেহকে রক্ষা করে। আনারসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে, যা আমাদের শরীরে কৃমি উৎপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বেশি আনারস খেলে কি হয় আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আনারস খাওয়ার উপকারিতা অনেক কিন্তু নিয়ম না জেনে অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি । আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আনারস বেশি খাওয়ার উপকারিতা, সমস্যা ও সমাধানসহ বিভিন্ন তথ্য পেয়েছেন।

বন্ধুদেরকেও এসব তথ্য জানাতে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন