রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
কলা সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমরা সবাই দিনের বেলা কলা খায়, কারণ আমরা অনেকেই রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা জানি না। তাই আজকে আমরা রাতে কলা খাওয়ার এমন কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা সকলের জানা প্রয়োজন। চলুন শুরু করি।
রাতে কলা আমরা কেন খাব? রাতে কলা খেলে আমাদের কি কি উপকার হয়? কলাতে কি কি পুষ্টি উপাদান থাকে? এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে নিচে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ভূমিকা
কলা বেরি জাতীয় একটি সুমিষ্ট ফল। সুমিষ্ট স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য কলাকে ফলের রানি বলা হয়। কলাতে থাকা সেরোটোনিন পরিপাক ও হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। কলায় প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট ও সুগার থাকে, যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। কলায় উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম পাওয়া যায়, যা ধমনী ও রক্তনালীর চাপ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই বলায়, যায় কলা একটি উপকারি ফল। তাই আজকে আমরা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
পাকা কলার উপকারিতা অনেক। কলাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে ইন্টারনাল কোষ ও রেডিক্যাল কোষের মাধ্যমে ক্ষতি হওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অতি পাকা কলায় পটাশিয়াম বেশি ও সোডিয়াম কম পরিমাণে থাকে, ফলে নিয়মিত এই কলা খেলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পাকা কলায় প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
রাতে পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কারণ পাকা কলায় প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট ও সুগার থাকে, যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। পাকা কলায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। কলার মধ্যে আঁশ থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে ও হজম ভালো করতে সাহায্য করে। পাকা কলাতে প্রচুর পরিমানে ট্রিপ্টোফ্যান থাকে। কলা খাওয়ার পর ট্রিপ্টোফ্যান সেরোটোনিনে পরিণত হয়ে যায়। সেরোটোনিন পরিপাক ও হতাশা দূর করতে সাহায্য করে।
কলা ত্বকের কোষে পানির পরিমান বৃদ্ধি করে ফলে ত্বকের লাবণ্যতা বজায় থাকে। কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ত্বকের কোলাজেন গঠনে ও ত্বককে ফ্রিরেডিকেল জনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কলা খেলে মানুষের ত্বক ফর্সা হয়ে যায়। পাকা কলায় থাকা ভিটামিন ই যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। পাকা কলাতে টিএনএফ-এ নামক এক ধরণের যৌগ আছে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পাকা কলা অনেক সময় অ্যান্টাসিডের মতো কাজ করে বুক জ্বালা কমায়। পাকা কলায় আয়রন ও কপার থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। । পাকা কলা নিয়মিত খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলার উপকারিতা
পাকা কলার উপকারিতা আমরা সকলেও জানলে কাঁচা কলার উপকারিতা অনেকেই জানি না। কাঁচা কলায় উচ্চ মাত্রায় স্টার্চ ও খাদ্যআঁশ থাকে, যা ডায়রিয়া ও পেটের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলাতে ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় শক্ত বা মজবুত করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলা কিডনি ক্যান্সার, বৃক্কের সমস্যা, শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলায় উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম পাওয়া যায়, যা ধমনী ও রক্তনালীর চাপ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং প্লাক জমে ধমনী সরু হয়ে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে কাঁচা কলা বেশ উপকারি। কারণ এতে থাকা শ্বেতসার খাবারের চাহিদা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত খাবার না খাওয়ায় ওজন ও কমতে থাকে।
কাঁচা কলায় ভিটামিন-বি৬ থাকে, যা রক্তের গ্লুকোজ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলায় ভিটামিন বি-৪ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে। এতে থাকা খনিজ ও পুষ্টি উপাদান চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করে এবং ভিটামিন- বি৬ এনজাইম ভাঙতে শক্তির যোগান দেয়। ফলে বিপাক প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি পায়।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই দিনের বেলা কলা খায় কিন্তু রাতে কলা খায় না। কারণ হচ্ছে, রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে না জানা। রাতে কলা খেলে ঘুম ভালো হয়। কলাতে থাকা অ্যামিনো ট্রিপটোফ্যান ঘুমের ধরণ নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটোনিন-হরমোন ও সেরোটোনিন উৎপাদন করতে সাহায্য করে। সেরোটোনিন মেজাজ স্থিতিশীলতা ও হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। ঘুম ও জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটোনিন।
কলাতে পটাশিয়াম থাকে, যা পেশীর কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাতে ঘুমানোর সময় কলা খেলে পেশি শিথিলতা ও পেশির ক্র্যাম্প প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সোডিয়ামের প্রভাব প্রতিরোধ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কলাতে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া রোধ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার তেমনি কলার উপকারিতাও অনেক। কলা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। কাঁচা কলা সবজি হিসেবে আর পাকা কলা ফল হিসেবে খাওয়া যায়। কলা কাঁচা ও পাকা অবস্থায় দুই রকমের বৈশিষ্ট্য ও পুষ্টিগুণের হয়ে থাকে। কাঁচা কলা সবুজ রঙের হয়। এতে শর্করার পরিমান কম থাকে এবং রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এছাড়াও আয়রন, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম,অ্যামিনো এসিড, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম উপাদান ও থাকে।
কাঁচা কলা পাকার সাথে সাথে কলার পুষ্টিগুণ বদলাতে থাকে। কাঁচা কলার রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ পাকা কলায় শর্করায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত পাকা কলাতে অ্যান্টি-অক্সিড্য়ান্ট ও শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। পাকা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়। কাঁচা কলা পেট খারাপের সমস্যা দূর করে।
কলাতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় খাবার ভালোভাবে হজম হয়। কলা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, কিডনি ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম পাওয়া যায়, যা শরীরের হাড় কে শক্ত, দৃঢ় ও উন্নত করে। এছাড়াও দাঁত মজবুত রাখে। কলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুল মজবুত ও সুন্দর হয়, ত্বকের তারণ্য ধরে রাখে এবং ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য
আমরা রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। যদি আর্টিকেল থেকে নতুন তথ্য পেয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।