টক দই দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় বিস্তারিত জানুন

টক দই খুবই উপকারি একটি খাবার। নিয়মিত টক দই খেলে যেমন শরীর ভালো থাকে, তেমনি নিয়মিত টক দই ব্যবহার করলে দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। টক দইয়ের নানাবিধ উপকারিতা অনেকেই জানে কিন্তু কিভাবে টক দই দিয়ে ফর্সা হওয়া যায় বা টক দই মুখে মাখা নিয়ম বা ব্রণ দূর করার উপায় অনেকেই জানে না। তাই আজকে আমরা টক দই দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।



টক দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ত্বক ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। টক দইয়ে ল্যাকটিক এসিড থাকে, যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

ভূমিকা

টক দইয়ের উপকারিতা অনেক। টক দই ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো দাগ থাকে, যা টক দই ব্যবহার এই কালো দাগ উঠানো যায়। টক দই দিয়ে ব্রণ দূর করা যায় এবং পুরনো ব্রণের দাগ উঠানো যায়। শুষ্ক ত্বকে টক দই ব্যবহার করে ত্বককে সতেজ ও কোমল করা যায়। টক দই ব্যবহারের ফলে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করা যায়, ত্বকের মরা চামড়া সতেজ করতে টক দইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ত্বকে টক দই ব্যবহার করলে ত্বক সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা পায়।

টক দই এর ফেস প্যাক

প্যাক-১

এক টেবিল চামচ টক দই এর সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকের ব্রণ দূর হয়।

প্যাক-২

এক টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে আধা চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণের দাগের ওপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে ব্রণের দাগ দূর হয়ে যায়।

প্যাক-৩

একটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটিয়ে এক টেবিল চামচ দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর হয়।

প্যাক-৪

এক টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে এক চা চামচ ওটমিল মিশিয়ে ত্বকে চক্রাকারে ঘুষতে হবে। ঘুষা শেষ হওয়ার ৫ থেকে ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকের মরা চামড়া সতেজ হয়ে ওঠে।

প্যাক-৫

এক চা চামচ টক দইয়ের সাথে এক চা চামচ মধু ও একটি টমেটোর পেস্ট মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

প্যাক-৬

এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রসের সাথে এক কাপ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে মাখতে পারেন। এটি ক্লিনজারের কাজ করে।

প্যাক-৭

আধা চা চামচ মধুর সঙ্গে আধা কাপ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে মুখ, গলা ও কপালে লাগিয়ে ভালোভাবে ২ থেকে ৩ মিনিট ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক অনেক বেশি ফর্সা হয়।

প্যাক-৮

টক দইয়ের সাথে হলুদ গুঁড়ো ও দুই - এক ফোঁটা সরিষার তেল ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যায় এবং ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।

প্যাক-৯

টক দইয়ের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে শরীরের যে অংশগুলো কালো হয়ে যায় সেই সকল অংশে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কালো দাগ অনেকটা গায়েব হয়ে যায়।

টক দই মুখে দিলে কি হয়

টক দই মুখে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। মুখের ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দূর করতে টক দইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। মুখের ব্রণ দূর করতে টক দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুখের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল করে তোলে। পুরনো ব্রণের দাগ সহ যেকোনো প্রকারের দাগ উঠাতে টক দই সাহায্য করে। মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করে মুখের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং মুখ মসৃণ করে তুলে। টক দইয়ে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশি থেকে রক্ষা করে।

টক দই মুখে মাখার নিয়ম

টক দই মুখে মাখার অনেকগুলো নিয়ম রয়েছে। টক দই এর সাথে পাতি লেবুর রস মিশিয়ে মুখ, কপাল ও গলাতে লাগিয়ে ভালোভাবে ২ থেকে ৩ মিনিট ভালোভাবে ঘুষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে মুখ, কপাল ও গলা পরিষ্কার হয়। টক দই ও বেসন একসাথে মিশিয়ে অথবা টক দইয়ের সঙ্গে হলুদ গুলো ও দু এক ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে ফেসপ্যাকের মতো মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।

টক দই, লেবুর রস ও চিনি একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ডার্ক সার্কেল এর জন্য কিছু তুলো টক দইয়ে ভিজিয়ে ডার্ক সার্কেলের জায়গায় ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ডার্ক সার্কেল এর সমস্যা দূর হয়। ব্রণ দূর করতে টক দইয়ে তুলো ভিজিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে বা দিনের বেলায় লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ব্রণ দূর হয়।

টক দইয়ের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে দাগের উপর ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে দাগ হালকা হতে শুরু করে। শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় টক দইয়ের সাথে কিছুটা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রেখে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হয়। এতে ত্বক আদ্র ও নরম হয়।

টক দই দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

আমরা টক দইয়ের বহুবিধ উপকারিতা জানি। কিন্তু টক দই দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় অনেকেই জানিনা। তাই আজকে কিভাবে টক দই দিয়ে মুখে ব্রণ দূর করা যায় তা জানবো। ব্রণ দূর করতে টক দই খুবই উপকারী। এক টেবিল চামচ টক দইয়ে কিছু তুলো নিয়ে ভিজিয়ে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ব্রণ দূর হয়।

টক দইয়ে থাকা ল্যাকটিক এসিড ব্রণ চটপট শুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। টক দই ও বেসন একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা তাড়াতাড়ি ভালো হয়। এছাড়াও টক দইয়ের সাথে হলুদ গুঁড়ো ও সরিষার তেল মিশিয়ে মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যায় এবং ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।

শুধু টক দই মুখে মাখার উপকারিতা

টক দই মুখে মাখার উপকারিতা অনেক। টক দই মুখে মাখলে ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দূর হয়। অনেক সময় টেনশনে বা অন্যান্য চাপে চোখের নিচে কালি পড়ে। টক দইয়ে কিছু তুলো ডুবিয়ে চোখের নিচে কয়েক মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে চোখের কালো দাগ যেমন দূর হয় তেমনি চোখের ফোলা ভাব কমায়। দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড এই কালো ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

মুখে ব্রণের সমস্যা দূর করতেও টক দই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কিছু তুলো টক দইয়ে ভিজিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে লাগালে সকালে ঘুম থেকে উঠে বা দিনের বেলায় লাগালে কয়েক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেললে ব্রণ ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও টক দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড সাহায্য করে। অনেক সময় ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ দেখা যায়। এ অবস্থায় সংক্রমণের উপর দইয়ের প্রলেপ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখলে সংক্রমণ ভালো হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিকস যে কোন সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। ত্বক অনেক সময় শুষ্ক হয়ে যায়। এ অবস্থায় টক দই পুরো মুখে মেখে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ত্বক আদ্র ও কোমল হয়। টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। ফলে টক দই মুখে মাখলে সহজেই ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃন হয়। শুষ্ক ত্বকের জন্য টক দই ময়েশ্চারাইজারের মতো কাজ করে। টক দই মুখের ব্রণ, রুক্ষতা, অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

শুধু টক দই মুখে মাখার নিয়ম

টক দই মুখে মাখার উপকারিতা অনেক। নিয়ম অনুযায়ী মুখে টক দই মাখতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। যেমন ডার্ক সার্কেল এর সমস্যার জন্য হালকা তুলে নিয়ে টক দইয়ে ভালোভাবে ডুবিয়ে চোখের নিচে বা পুরো মুখে লাগানোর ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ডার্ক সার্কেল এর সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও চোখের ফোলা ভাব কমায়।

ব্রণের সমস্যা দূর করতে এক টেবিল চামচ টক দইয়ে কিছুটা তুলো ভিজিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা দিনের বেলায় লাগালে কয়েক ঘণ্টা পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দিলে ব্রনের সমস্যা দূর হয়। ত্বকের সংক্রমণ রোধে ক্রিমের মতো টক দইয়ের প্রলেপ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে যতদিন না সংক্রমণ পুরোপুরি কমছে।

দিনে দুই তিনবার এভাবে লাগাতে হবে। শুষ্ক ত্বকের সমস্যার জন্য ক্রিমের মত পুরো মুখে টক দই মেখে দশ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে শুষ্ক ত্বক সতেজ ও কোমল হয়ে ওঠে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টক দই

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টক দই খুবই উপকারী। টক দইয়ে ল্যাকটিক এসিড থাকে, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করে। ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর হয়।

টক দইয়ের সাথে মধু ও টমেটোর পেস্ট মিশিয়ে ত্বকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

লেখক এর মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলে আমরা টক দই মুখে মাখার উপকারিতা ও টক দই মুখে মাখার নিয়ম সহ আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। টক দইয়ের নানাবিধ উপকার সম্পর্কে পুরো পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। টক দই ব্যবহার করে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায় এবং তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। টক দই দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় এবং ডার্ক সার্কেল বা পুরনো ব্রণের দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনেছি।

টক দই ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো দাগ হয় যা টক দই ব্যবহার করলে অনেকাংশে কালো দাগ কমে যায়। এই আর্টিকেলে টক দই ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করা এবং ফেসপ্যাক এর উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।

আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন। বন্ধুদের কেউ টক দইয়ের এসব উপকারিতা বা গুনাগুন সম্পর্কে জানাতে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন